তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | Impact of ict on social life: Impact of ict on social life. Why is Technology important? Is technology good or bad? আপনাকে আমাদের https://jobpreparations.com/ ওয়েবসাইটে স্বাগতম । আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমরা নতুন একটি কন্টেন্ট নিয়ে আসলাম। চলো তাহলে শুরু করি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | Impact of ict on social life
সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব (Impact of ICT on Social Life)
বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তি বদলে দিয়েছে আমাদের সমাজব্যবস্থা। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সমগ্র বিশ্ব পরিণত হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজে। পাল্টে গেছে সমাজ ব্যবস্থা, যোগাযোগের ধরন, শিক্ষা-গবেষণার কৌশল, বিনোদনের মাধ্যম প্রভৃতি। এতদসত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তির কিছু কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। সমাজ জীবনে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ও কুফল, উভয়েরই প্রভাব। নিচে সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কয়েকটি সুফল ও কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

তথ্যপ্রযুক্তির সুফল (Why is technology good?)
১। অফিস আদালতে :
আজকাল প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মাসিক বেতন-ভাতার হিসাব, কমিশন, ওভারটাইম ও বোনাস নির্ণয়, আয়কর, বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরি ও মুদ্রণ করা, চিঠিপত্র টাইপ করা, সংরক্ষণ করা ও ই মেইল করা, সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা, প্রজেক্ট প্রোফাইল ও বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্ট তৈরি করা প্রভৃতি কাজে টেলিফোন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ইন্টারনেট, ই-মেইল তথা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
২। কলকারখানায়
বিভিন্ন কল-কারখানায় পণ্যের ডিজাইন, মান নিয়ন্ত্রণ করা, যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিবেশে রোবটের ব্যবহার, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, পণ্যের চাহিদা নিরুপণ, মজুদ ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাজার ব্যবস্থাপনা, উৎপাদিত পণ্য ক্রেতা সাধারণের কাজে উপস্থাপন ও প্রচার করা প্রভৃতি কাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়।
৩। ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে
ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন লেনদেনসহ বিভিন্ন কাজকর্ম সম্পাদনে ব্যাপকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ব্যাংকে অর্থ জমা বা উত্তোলন, ক্লিয়ারিং হাউস বা আন্তঃব্যাংক লেনদেনে অটোমেশন সিস্টেম, রেমিটেন্স বা বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানো, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক কাজ করা, কার্ডের মাধ্যমে এটিএম বুথে লেনদেন করা, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় হিসাব করা প্রভৃতি কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হচ্ছে।
৪। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে
ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংক, বিমা, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি ক্ষেত্রে আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অচল। টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলিভিশন, বুলেটিন বোর্ড, ই-মেইল, ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট প্রভৃতি আজ ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
৫। শিক্ষাক্ষেত্রে
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানের বিষয়কে আজ সহজলভ্য ও আধুনিক করেছে। বই-পুস্তক, জার্নাল, ম্যাগাজিন আজকাল সিডিতে পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের বর্ণমালার শেখার স্থান দখল করেছে শিশুতোষ মাল্টিমিডিয়া সিড়ি। ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে গবেষণার সকল উপকরণ। একজন গবেষক দিনের পর দিন লাইব্রেরিতে রেফারেন্স না খুঁজে ইন্টারনেটে একটি ক্লিক করেই পেয়ে যাচ্ছে যে কোনো গবেষণা সামগ্রী, তথ্য বা দুর্লভ কোনো চিত্র। ইচ্ছা করলে যেকোনো শিক্ষার্থী বাংলাদেশে বসেই জাপানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে কিংবা আমেরিকার কোনো লাইব্রেরির বই পড়তে পারছে।
৬। যোগাযোগ ব্যবস্থায়
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজ ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। টেলিফোন, মোবাইল, টেলিভিশন, ই মেইল প্রভৃতির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে বিশ্বের যেকোনো দেশের খবরাখবর মুহূর্তের মধ্যেই সংগ্রহ করা যায়। আজকাল টেলিভিশনের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইল দূরে অনুষ্ঠিত কোনো খেলা বা সংঘটিত কোনো ঘটনার লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে।
৭। বিজ্ঞান ও চিকিৎসাক্ষেত্রে
তথ্যপ্রযুক্তির ফলে মানুষের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসাসেবা রোগ নিরাময়ের সর্বশেষ প্রযুক্তি, নিত্য নতুন ঔষধ উদ্ভাবন প্রভৃতি কাজ সহজতর হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান ও গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারেনেটের মাধ্যমে অনলাইন চিকিৎসাসেবা যেমন- ঘরে বসেই দূরের কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা যাচ্ছে।
৮। শিল্প-সাহিত্য ও বিনোদনে
শিল্প-সাহিত্য বিনোদন, প্রকাশনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শিল্প উৎপাদিত পণ্য, কোনো দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা প্রভৃতি সংক্রান্ত তথ্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে যাচ্ছে সমগ্র বিশ্বে। সারা বিশ্বের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান আজ ঘরে বসে উপভোগ করা যাচ্ছে। টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট প্রভৃতি হয়ে উঠছে বিনোদনের সর্বাধুনিক মাধ্যম।
তথ্যপ্রযুক্তির কুফল (Why is technology bad?)

১। অশ্লীলতা বৃদ্ধি
তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম উপাদান টিভি ও ইন্টারনেটে অনেক অশ্লীল কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য অনুপযোগী বিষয়াদি রয়েছে। প্রযুক্তি উন্নতির ফলে নিষিদ্ধ বিষয়ের সকল উপকরণ হাতের নাগালেই পাচ্ছে। নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে উঠছে। এসবের ফলে সমাজে অপরাধ ও অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিনয়ভাব কমে যাচ্ছে, নৈতিক চরিত্র গঠনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
২। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি :
স্যাটেলাইটের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, মানসিকতা, শ্রদ্ধাবোধ, অপরাধ প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়ে উদ্বেগজনক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিদেশি চ্যানেলে বিদেশি ভাষায় কার্টুন ও বিভিন্ন ছবি শিশুদের মানসিক ও মেধাবিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, মাতৃভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষায় কথা বলা বা ভাব বিনিময় করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শিশু মনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।
৩। গোপনীয়তা প্রকাশ
তথ্যপ্রযুক্তির ফলে অনেকের গোপনীয়তা প্রকাশ পাচ্ছে। কারো ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক মূল্যবান তথ্য, কম্পিউটার বা ফাইলের পাসওয়ার্ড, ই-মেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড, বাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ডের গোপন নম্বর প্রভৃতি জেনে একজন আরেকজনের ব্যক্তিগত সুনাম কিংবা ব্যবসায়িক সুখ্যাতি নষ্ট করছে।
৪। মিথ্যা প্রচারণা
খুব সহজেই কারো ব্যক্তিগত ছবি, সংবাদ বা তথ্যাদি এডিটিং করে অসত্য বক্তব্য, কাল্পনিক কাহিনী বা মিথ্যা ছবি ছাপিয়ে বিভিন্ন যোগাযোগের ওয়েবসাইট বা ব্লগের মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন বা মানহানি করতে পারে। এসব কাজের মাধ্যমে জাতিগত দাঙ্গা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও দেশের সার্বভৌমত্বের হুমতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভৃতি সৃষ্টি হতে পারে।
৫। বেকারত্ব বৃদ্ধি :
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় কিংবা অটোমেশনের ফলে অনেক ক্ষেত্রে সনাতনী প্রথা উঠে যাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা। যেমন- ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসে তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দলিল বা নকশা সংরক্ষণে ডেটাবেজ ব্যবহারের ফলে অল্পশিক্ষিত দলিল লেখকদের যারা কম্পিউটারে দলিল লেখার উপর প্রশিক্ষিত হতে পারেনি তারা বেকার হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল মেশিনে পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড প্রভৃতি প্রবর্তনের ফলে অনেক তুলিশিল্পী বেকার হয়ে পড়েছে।
৬। প্রথা, সংস্কৃতি ও ব্যবসার বিলুপ্তি:
তথ্যপ্রযুক্তি উন্নতির ফলে অনেক প্রথা বা শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। যেমন ডেটা সংরক্ষণের সিডি বা ডিভিডি প্রবর্তনের ফলে চৌম্বকীয় ডিস্ক বা ফ্লপি ডিস্ক প্রভৃতির ব্যবহার কিংবা কাগজে লেখার প্রবণতা, ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অ্যানালগ ক্যামেরার ব্যবহার, এলসিডি বা এলইডি মনিটর ব্যবহারের ফলে সিআরটি মনিটরের ব্যবহার প্রভৃতি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। ইন্টারনেট, মোবাইল টেলিফোন ও যোগাযোগের সামাজিক ওয়েবসাইট ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে হাতে চিঠি লেখার প্রথা ও অভ্যাস এখন আর নাই বললেই
৬. শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি :
তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বা উপাদান মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগ তৈরি করছে। রঙিন টিভি চোখের অসুখ, অবিরাম কম্পিউটারে বসার ফলে কোমর, ঘাড় বা হাতের কব্জি ব্যথা, মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহারের ফলে হৃৎপিণ্ড ও কানের সমস্যা, ভিডিও গেইম শিশুদের মানসিক আসত্তিাহ ব্যবহারকারী বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন (ICT and Economical Development)
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিয়ে কম্পিউটার, কম্পিউটার সফ্টওয়্যার এবং টেলিযোগাযোগ বা বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, স্থানান্তর এবং উদ্ধার করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি বিশ্বে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে যা চিন্তা করা যায়নি, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন তা করা যাচ্ছে-
অনায়াসে। বিশ্বের যেসব দেশ প্রযুক্তিকে যত সহজে গ্রহণ করেছে, সেই সব দেশ তত দ্রুত উন্নতি করেছে। একটা সময় সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো বেকারত্বের ভয়ে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগায়নি। ফলে সেসব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে। আমাদের দেশও সঠিক সময়ে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতির লক্ষ অর্জন করতে পারছে না। দেরিতে হলেও সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে এবং অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যেসব ক্ষেত্রে অবদান রাখছে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
১। ই-কমার্স :
ই-কমার্স একটি আধুনিক বাণিজ্য পদ্ধতি। ই-কমার্সের অর্থ অনলাইনে ব্যবসায়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা। কোনো পণ্য, সেবা বা তথ্য আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়, অর্ডার, সরবরাহ বা বিনিময় পদ্ধতিকে ই-কমার্স বলা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রেতা ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো স্থানের পণ্য বা সেবার দাম, মান যেমন দেখতে পারে, সেই সাথে যেকোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে। একইভাবে বিক্রেতা ঘরে বসেই তার উৎপাদিত বা ক্রয়কৃত পণ্য বা সেবা প্রদর্শন ও বিক্রয় করতে পারে। ক্রেতা ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারবে। সীমিত হলেও বাংলাদেশে কিছু অনলাইন বুকস্টোর, অনলাইন টেন্ডার সেন্টার, অনলাইন শপিং মল এবং হোটেল, বিমান বা ট্রেন প্রভৃতিতে সিট রিজার্ভেশন সিস্টেম চালু করছে।
২। ই-গভর্নেন্স :
ই-গভর্নেন্স হলো সেসব প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা অফিস-আদালতের গতানুগতিক কাগজনির্ভর নোটিশ, জরিপ, বিল, কন্ট্রাক্ট ইত্যাদি কাজকে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক রূপ দান করে। এই প্রক্রিয়া সনাতন অফিসকে কাগজবিহীন অফিস বা ডিজিটাল অফিসে রূপান্তর করতে পারে এবং কাজে গতিশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। ই-গভর্নেন্সের ব্যবহার একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের মাঝে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের অধীনে ই-গভর্নেন্দ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন শিক্ষা বোর্ডসমূহ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ, ব্যানবেইস, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ইত্যাদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ প্রতিষ্ঠানে বসেই প্রায় সকল কার্যক্রম করতে পারছে। এতে সময় এবং অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হচ্ছে এবং কাজের গতি ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রম আলাদা আলাদাভাবে সম্পন্ন করছে। এই কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করা গেলে (যাকে ই-গভমেন্ট বলা হয়) আমাদের সময় ও অর্থের অপচয় রোধ করা যাবে এবং দেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাবে।
৩। তথ্য প্রচার ও প্রসার
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে যে কেহ যেকোনো তথ্য যেকোনো স্থানে বসে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট উপাদান ব্যবহার করে প্রচার এবং সংগ্রহ করতে পারে। তথ্য প্রচার এবং প্রসারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে। শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের যেকোনো স্থানের যেকোনো নতুন উদ্ভাবন সাথে সাথে সারা বিশ্বের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে এবং সবাই সেই নতুন উদ্ভাবনে নিজেকে সমৃদ্ধ করছে এবং বর্তমান বিশ্বের জন্য যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে।
৪। কর্মসংস্থান
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক দূরবস্থা দূর করে প্রযুক্তিভিত্তিক স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শ্রমশক্তি রপ্তানি। এই শ্রমশক্তি যদি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হয় তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হার আরে বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবে। সরকারের উচিত তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে জাতিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা।
৫। তথ্যপ্রযুক্তি বাজার
কম্পিউটার নেটওয়ার্কভিত্তিক হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার হলো তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য। আমাদের দেশে হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারক কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। কিন্তু সফটওয়্যার বানানোর মতো প্রচুর জনশক্তি আছে বা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে জনশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব। পর্যাপ্ত সফটওয়্যার ফার্ম গঠন করে বিদেশে সফটওয়্যার রপ্তানির মাধ্যমে কিংবা ঘরে বসেই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
৬। কৃষি উন্নয়নে
তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই পারে কৃষিতে আমাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে। আমাদের দেশের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি মানুষ সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। সুতরাং কৃষিকে আধুনিকীকরণ করতে না পারলে আমরা কোনোভাবেই অর্থনীতিতে অগ্রগতি সাধিত করতে পারব না। কৃষিকে আধুনিকীকরণ করতে সবার আগে প্রয়োজন কৃষকের কাছে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা।
অন্যথায় আমরা অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারব না। কৃষি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলো বাংলায় প্রকাশ করতে হবে। কৃষককে সঠিক সময়ে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য এবং কৃষি পণ্যের বাজার সংক্রান্ত তথ্য সঠিক সময়ে সরবরাহ এবং তা যেন কৃষকের নিকট পৌঁছে তার ব্যবস্থা করে কৃষিখাতকে অগ্রগতি করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে হবে। কৃষি তথ্যকে সহজলভ্য করার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭। বেকারত্ব দূরীকরণে
বর্তমান বিশ্বে দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি জানা জনশক্তি বিশেষ প্রয়োজন। আমরা যদি আমাদের শিক্ষিত বেকার জনশক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে পারি তাহলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের সরকারিভাবে বা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মতো কাজে নিয়োজিত করে বেকার সমস্যার সমাধান করা যায় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখা যায়।
৮। কলসেন্টার:
বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও সিস্টেমকে প্রোভাইড করার জন্য যে সিস্টেম তাকে বলা হচ্ছে কলসেন্টার। এই কলসেন্টারের মাধ্যমে বিপিও সার্ভিস প্রোভাইড করা হয়ে থাকে। ব্যবসায় সফলতা অর্জনের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে।
- উচ্চগতির বিরামহীন ইন্টারনেট সেবা থাকতে হবে।
- কলসেন্টারগুলো বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রাখতে হবে।
- আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে দক্ষ বিপণন কর্মীর পাশাপাশি বিদেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
- কলসেন্টার ব্যবসায় প্রসারের জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে।
- কলসেন্টারের ব্যবসায় পরিচালনার জন্য ইংরেজিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
৯। আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনায়
আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনাকে সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর করে তুলতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার কাজ মূলত সফটওয়্যার নির্ভর। আমাদের ব্যাংকগুলো যেন আমাদের দেশের তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহার করে সে দিকে সরকারসহ সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের যাতে ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেদিকে নজর দিতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু শাখা ব্যাতিরেকে প্রায় সকল ব্যাংক বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ব্যাংকগুলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কম জনশক্তি দিয়ে বেশি গ্রাহকের সেবা দিতে পারছে। এতে দেশের অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে।
১০। ভূমি ব্যবস্থাপনায়
বাংলাদেশে যে ঘনত্বে মানুষ বসবাস করে একই ঘনত্বে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ বসবাস করালে সারা বিশ্বের সকল মানুষের স্থান সংকুলান হয়েও এক-তৃতীয়াংশ জায়গা খালি থাকবে। প্রায় ১৫ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে ভূমির পরিমাণ নিতান্তই অল্প। এই অল্প ভূমির কিছু অংশ আবার আছে মালিকানাহীন অর্থাৎ খাস জমি। স্বল্প ভূমি, অধিক জনসংখ্যা হওয়ার কারণে জমির দাম যেমন আকাশচুম্বি আবার জমি সংক্রান্ত বিরোধ এত বেশি যে
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উপর তা বিরাট প্রভাব ফেলছে। লাখ লাখ মামলা জমে আছে এই সকল জমি সংক্রান্ত। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা সম্ভব। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত কাজও শুরু হয়েছে। একই ডেটাবেজ ভূমি প্রশাসন ও আদালত ব্যবহার করলে মামলা নিষ্পত্তি দ্রুততর হয়। ভূমি মালিকদের ভূমি সংক্রান্ত আইডি কার্ড সরবরাহ করা যেতে পারে, যা বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
১১। নারীর ক্ষমতায়ন:
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। শিক্ষার হারে নারীরা পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে। পাশের দেশ ভারতে কলসেন্টারগুলোতে নারীরাই বেশি কাজ করে। আমাদের দেশের নারীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলে বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে হবে।
১২। ইউটিলিটি বিল ব্যবস্থাপনায় :
সরকার সাধারণ মানুষের জন্য কিছু ইউটিলিটি সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন টেলিফোন, গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ। এই সব সেবার জন্য সাধারণ জনগণের কাছ থেকে সরকার কিছু মূল্যও নিয়ে থাকে। এই খাতগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে আসছে। এই লোকসান সাধারণত অব্যবস্থাপনার কারণেই হয়ে থাকে। এই খাতগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বচ্ছতা এনে লাভজনক খাতে রূপান্তরিত করা যায়।
যেসব ক্ষেত্রে মিটার ব্যবহার করা হয় সেখানে ডিজিটাল মিটার বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রিপেইড সিস্টেম চালু করে সিস্টেম লস বলে কথিত লস সহজেই দূর করা যায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সকল ধরনের দুর্নীতি রোধ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।
এছাড়াও প্রায় সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কাজের স্বচ্ছতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, একইভাবে কাজ করার গতি ও কাজ করার আগ্রহও বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। তাই আমাদের উচিত সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা যে আর্টিকেল লিখেছি তা অবশ্যই তোমাদের উপকারে আসবে। আর যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সবার শুভ কামনা করে আখানে শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।